রাজধানীতে ভাড়ায় যাত্রী নেয়ার কথা বলে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে গাড়ি পার্টি। প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে তারা। চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই এরা ছিনতাইকারী।
কখনো যাত্রী বহনের ছলে টার্গেট করা ব্যক্তিকে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। আবার কখনো ফাঁকা রাস্তায় জোর করেই গাড়ির মধ্যে টেনে নেয়। গাড়িতে তুলেই শুরু হয় নির্যাতন। টাকা, মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন, ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড সবই তাদের চাই।
তাদের কবলে পড়লে মোটরসাইকেল আরোহীদেরও রেহাই নেই। মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি সবই লুটে নেয় এ চক্রটি। রাজধানীতে সক্রিয় হয়ে ওঠা এমন চক্রকে ‘গাড়ি পার্টি’ বলে অভিহিত করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
শাহবাগ এলাকায় গাড়ি পার্টির কবলে পড়েন মোজাম্মেল হোসেন। রাত ৮টার দিকে তিনজন যাত্রী নিয়ে একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে একজন মতিঝিল যাবে বলে ডাকছিল। ভাড়া মাত্র ২০ টাকা দিতে হবে বলার পর রিপন গাড়িতে উঠেন। তারপরই তিন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী তাকে জিম্মি করে। একজন পকেট থেকে পিস্তল বের করে বলে, যা আছে দিয়ে নেমে যা। চিৎকার কিংবা কথা বললে সোজা গুলি হজম করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মানিব্যাগসহ যা ছিল দিয়ে দেন।
এরপর রাজউক এভিনিউ এলাকায় মাইক্রোবাসের দরজা খুলে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দ্রুত চলে যায়। এ ঘটনায় তিনি মতিঝিল থানায় গেলে পুলিশ ঘটনাটি সাধারণ ডায়রি হিসেবে লিখে রাখে।
কয়েকদিন আগের ঘটনা। তখন রাত ৮টা। ধানমন্ডি এলাকার ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন রায়হান চৌধুরী। তখন সাদা রঙের মাইক্রোবাস থেকে যাত্রী ডাকছিলেন, একজন দরকার, একজন। তিনি চালকের সঙ্গে ভাড়ার ব্যাপারে কথা বলেন। মাত্র ৩০ টাকা ভাড়ায় রাজি হন চালক। গাড়িতে ওঠার পরই যাত্রী বেশে থাকা তিন ছিনতাইকারী তাকে জিম্মি করে। একজন পকেট থেকে পিস্তল বের করে বলে, কথা বললেই গুলি করা হবে।
মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে পল্টন এলাকায় রায়হানকে নামিয়ে দিতে চান তারা। বিপত্তি বাধায় মানিব্যাগে থাকা একটি ক্রেডিট কার্ড। যানজটের মধ্যে গাড়ি ধীরে চলতে থাকে, আর ভিতরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। রায়হানের কার্ডের পিন নম্বর চান তারা। তিনি ভুলে গেছেন বলে দাবি করলে পিস্তলের বাঁট দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করেন একজন। এক পর্যায়ে পিন নম্বর বলে দেন মাসুদ।
মতিঝিলে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের কাছে গিয়ে মাইক্রোবাসটি দাঁড়ায়। একজন নেমে যান। গাড়ি আবার চলতে থাকে। কিছুক্ষণ পর একটি কল আসে একজনের ফোনে। তখন গাড়ি ঘুরে আবার দৈনিক বাংলা মোড়ে আসে। হঠাৎ করেই গাড়ির দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয় রায়হানকে।
ভুক্তভোগী রায়হান জানান, নগদ আট হাজার ও ক্রেডিট কার্ডের ২৮ হাজার টাকা খোয়ান তিনি। এখানেই থেমে থাকে না এ চক্র। কারও কাছে টাকা বা মূল্যবান কিছু না পেলে তাকে আটকে আদায় করছে মুক্তিপণ।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারা ছাড়াও আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, কাওলা, বিমানবন্দর সড়ক, মহাখালী, কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা, কাকরাইল, মতিঝিল, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ধানমন্ডি, মিরপুর রোড ও গাবতলী এলাকায় ছিনতাইকারী ১০টি চক্র রয়েছে। গাড়ি পার্টির সদস্যরা উঠতি বয়সের তরুণ থেকে যুবক।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার মতে, এরা ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। রাজধানীতে পেশাদার ছিনতাইকারীদের তালিকা থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে রয়েছে। তারপরেও অনেকেই রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই অপরাধী চক্রটি তিনটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনে যাত্রী বহনের জন্য বসে থাকে। টার্গেট করা লোককে গাড়িতে উঠিয়ে ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে মালামাল কেড়ে নেয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেকর্ডপত্র বলছে, প্রতি রাতেই আহত লোক জরুরি বিভাগে আসে। এদের প্রায় সবাই প্রহারে আহত অবস্থায় এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যায়। ঘটনা সম্পর্কে আহতরা কর্তব্যতর চিকিৎসককে যে তথ্য দেয় তা হচ্ছে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মারপিট করে জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা থানা পর্যন্ত তেমন একটা গড়ায় না।
আবার কেউ কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে থানায় মামলা করেন। তবে মাইক্রোবাস কিংবা প্রাইভেটকারের নম্বর ও আরোহী সম্পর্কে ঘটনার শিকার লোক পুলিশকে কোন তথ্য দিতে পারেন না। আবার হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যারা চলে যান তাদের অনেকের কথা, থানায় অভিযোগ করলেও প্রতিকার মিলে না।
(সংগৃহীত)
ভালো থাকুন | School of Awareness
No comments:
Post a Comment