একটি ঘটনা যা আপনাকে শেখাবে কীভাবে এমন আকস্মিক বিপদে মাথা ঠাণ্ডা রেখে বুদ্ধি করে বিপদ থেকে বাঁচতে হয়! সেই সঙ্গে পূর্বে থেকে কী কী ব্যাকআপ রাখতে হয়।
২৪ ঘন্টা লাগলো এই পোস্টটা লেখার মতো শক্তি সঞ্চয় করতে! প্রতিটা মেয়ে এবং মা-বোন-বউ আছে এমন ছেলেরাও পড়বেন প্লীজ! কখন কার জীবন বেঁচে যায় আমার এই স্ট্যাটাসটা দেখার সুবাদে বলা যায় না! শুধুমাত্র অস্বাভাবিক রকম শক্ত মনোবলের অধিকারি করে ছোটবেলা থেকে বড় করার কারনেই সম্ভবত আজকে আমি বেঁচে আছি এবং এই কথাগুলো লিখতে পারছি! আচ্ছা, বাকি কথা পরে- আগে ঘটনা বলি-
গতকাল রাত ৯টা, সিটি কলেজের পরের গলি, সম্ভবত ধানমন্ডি ৩/এ, যেখানে ভি.আই.পি বাসস্ট্যান্ড, ওই গলির মুখ থেকে রিক্সা নিলাম জিগাতলা যাবো বলে, যায়গাটা অনেকটা ফাঁকাই ছিলো! তো যাই হোক, রিক্সা চলা শুরু করতেই একজন মধ্যবয়সী লোক এসে রিক্সা আটকে নিজেকে সিভিল পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে আইডি দেখালো আর রিক্সাওয়ালাকে থামতে আদেশ দিলো, রিক্সাওয়ালা তার কথামতোই কাজ করছিলো, যেহেতু সে পুলিশ বলে বেশ হম্ভিতম্ভি করছিলো! তারপর আমাকে সে বলা শুরু করলো, ব্যাগ চেক করবে, আমি এই করেছি সেই করেছি নানা কথা! যখনি দেখলাম তার অসংলগ্ন কম্পলেইন আমার নামে আমি বললাম ঠিক আছে, গাড়ি আনেন পুলিশের, বাকি কথা থানায় গিয়ে হবে, আমিও আমার গার্ডিয়ান কল দেই, সে ওই অবস্থায় প্রায় জোর করেই রিক্সায় উঠে গেলো এবং আমি বুঝতেসিলাম যে এইটা ছিনতাই বা কিডন্যাপ চক্র! সে উঠে রিক্সাকে বললো চালাও। রিক্সা চলতে শুরু করলো, সে এত আজেবাজে কথা বলতেছিলো, যে রাস্তার এক দুইজন পথচারী খেয়াল করলেও সে ইজিলিই তাদেরকে বিলিভ করায় ফেলবে যে সে সিভিল পুলিশ এবং আমি খারাপ মেয়ে! আমি জাস্ট আশপাশ দেখতেছিলাম আর ভাবতেছিলাম আমি কিভাবে জান নিয়ে বাসায় যাবো, কিভাবে আমাকে অজ্ঞান করার আগেই আমি পালাতে পারবো, এক পর্যায়ে আমি ভাবলাম হট-টকে যাবো না, যদি আমি তর্ক করি, হয়তো সে এটাক করে বসতে পারে, অথবা অজ্ঞানের চেষ্টা করতে পারে, আমি জাস্ট তার কথা শুনতেছিলাম এবং একটু লোকজন আসে এমন যায়গার অপেক্ষা করতেছিলাম! কথার ফাঁকে আমি বললাম আমি আমার আংকেলকে কল দিচ্ছি আপনি কথা বলেন, উনি একজন এডিশনাল এস.পি। সে তখন রীতিমত চেঁচিয়ে উঠলো এবং খুব উল্টাপাল্টা আচরন করতে লাগলো- মনে হচ্ছিলো কিছু একটা করে বসবে! আমাকে বারবার বলা শুরু করলো তার বাসায় যেতে নাহয় আমাকে নেক্সট আর খুঁজেও পাবেনা কেউ, এক সময় এটাও বললো, আমার গায়ে হাত দেয়া পারমিট করলে সে তখনি নেমে যাবে! আমি শুধু ভাবতেছিলাম আমি তনুর মতো হারিয়ে যাবো না,যেতে পারিনা! আমাকে আমার মায়ের কাছে ফিরতেই হবে! আমি তাকে শান্তভাবে কথা বলতে লাগলাম, এমন ভাব ধরলাম যে আমি অসহায় মেয়ে এবং ভয় পেয়ে কনভেন্সড হয়ে গেসি তার কথা মানতে, এই অবস্থায় দেখলাম রিক্সা স্টার হোটেলের মোড়ের কাছাকাছি এবং আমি ইয়েলোর বিরাট আউটলেট দেখতে পাচ্ছি! সামনে ৪-৫টা প্রাইভেট কার দেখলাম, আমি জাস্ট এক সেকেন্ডও আর কিচ্ছু না ভেবে শরীরের সমস্ত শক্তি এক যায়গা করে চলন্ত রিক্সা থেকে প্রায় ২-৩ হাত সামনে লাফ দিলাম এবং একটাবারের জন্য আর পিছনে না তাকিয়ে এক দৌড়েই রাস্তা পার হলাম! একটা বাইক আমার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলো, লোকটাকে স্যারিও বলতে পারলাম না!
রাস্তা পার হয়ে কিছুদুর দৌড়ে দেখলাম রাইফেলস এর সামনে একটা সিএনজি মাত্রই খালি হচ্ছে, রীতিমত প্যাসেঞ্জারকে ধাক্কায় আনি ভিতরে ঢুকে দরজা আটকায় বললাম মামা সামনের গলিতে ঢুকেন, ছিনতাইকারী পিছনে! আল্লাহ্ সহায় ছিলো লোকটা টান মারলো গাড়িটা! বাসায় ঢুকলাম ১০মিনিটের মাঝেই, স্থির হতে হতে প্রায় দুই ঘন্টা লাগলো, দুই ঘন্টা পর অনিককে বললাম ঘটনা!
অনেক ভয়াবহ একটা এক্সপেরিয়েন্স আমি জাস্ট অল্প কয়টা কথায় লিখলাম, এভাবে পড়ে কেউ হয়তো অনুমানও করতে পারবেন না আমার উপর দিয়ে ওই সময়টুকুতে কি যাচ্ছিলো! হয়তো বলবেন, আমার উচিত ছিলো নেমে তাকে ধরার ব্যবস্থা করা, লোক জড়ো করে বলা! কিন্তু সত্যি বলতে এই আমি, যে কিনা ইভটিজার পিটানোতে ফ্রেন্ডদের মাঝে বলতে গেলে সেই লেভেলের জনপ্রিয়- সেই আমিই ওই মোমেন্টে ওই ব্যাটাকে কিভাবে শায়েস্তা করবো এটা একটাবারের জন্যও ভাবতে পারতেছিলাম না, আমার ওয়ান এ্যান্ড অনলি চিন্তা ছিলো, আমি বাসায় যাবো, আমাকে আমার বাবা-মা'র কাছে ফিরতেই হবে, আমি আরেকজন তনু হতে পারিনা, পারবোনা,আমাকে বাঁচতেই হবে!
হ্যা, কালকে আমি পালিয়েই বাঁচছি, ওই ব্যাটাকে ধরায় দেয়ার মতো কিছু করতে পারিনাই, আমার কাছে তখন নিজের ইজ্জত আর জান বাঁচানোটাই ফরয হয়ে গেসিলো! নাহয় হয়তো আজকে আমিও জাতীয় দৈনিকের হেডলাইন থাকতাম, সারাদেশ আমাকে নিয়েও আন্দোলন করতো এবং হায় হায় শব্দে আকাশ বাতাস ভারী করতো। আর দুইদিন পর সবাই এই তারিনকে ভুলে যেত, শুধুমাত্র যে পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যেতো সেটা হতো আমার পরিবার!
আমার মা, বাবা, ভাই, হাসবেন্ড, কাছের আত্নীয়রা- শুধুই আমার সবাই! পারিনি লোকটাকে কিছু করতে, কিন্তু পেরেছি কিডন্যাপড/রেপড/মার্ডারড না হয়ে আল্লাহ্র দেয়া এই জীবনটা নিয়ে বেঁচে ফেরত আসতে! আল্লাহ্র শোকর আদায় করে শেষ করা সম্ভব না! দোয়া চাই সবার, যেন এই দ্বিতীয় জীবন ভালো ভাবে শুরু করতে পারি!
বিঃদ্রঃ আমি ডিএসডি গ্রুপে একটা পোস্ট দেখেছিলাম কয়েকমাস আগে, হুবহু এমনই ঘটনা, জাস্ট মেয়েটা রিক্সা থেকে পালাতে পারেনি বলে সিভিল-পুলিশ পরিচয় দেয়া লোকটার খপ্পরে পরে ফিজিক্যাল হ্যারাসমেন্ট এবং ছিনতাই- দুটোরই স্বীকার সে হয়েছিলো! আজকে তাই ভাবলাম যদি আমার এই পোস্ট দেখে একটা মেয়েও এই ব্যাপারে সচেতন হতে পারে বা বিপদে পরলে ঠান্ডা মাথায় মোকাবেলার চিন্তা করতে পারে, যদি একজনেরও উপকার হয়- তাতেই হয়তো বেঁচে যাবে আমার পরিবারের মতো আরো একটি পরিবার!
সবাই কপি-পেস্ট/ শেয়ার করে কাইন্ডলি ব্যাপারটা আরো জানানোর চেষ্টা করবেন পরিচিতজনদের মাঝে!
(সংগৃহীত)
ভালো থাকুন | School of Awareness
No comments:
Post a Comment