২সেপ্টেম্বর, ২০১৭ মধ্যরাতে নিম্নগামী তূর্ণা এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরছিলাম। কোচ নং ৬২২৬ (ত)। রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটায় হঠাৎ ট্রেনটি একটি অজ্ঞাতস্থানে থেমে যায়। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু ট্রেনটি একেবারে না থেমে আবার চলার চেষ্টা করে। কিন্তু একটা বিকট শব্দ করে ট্র্রেনটি পুরোপুরি থেমে যায়। তখনই শুনি ভয়ানক আর্তনাদ। ঠিক পিছনের আসনের এক মহিলা যাত্রী চিৎকার করে লাফিয়ে উঠেছেন। জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখি এক যুবক ছাদ থেকে ঝুলে আছে। তার হাতে লোহার আংটা। আর বুঝতে অসুবিধা হলো না। আমি চিৎকার করে যাত্রীদের সাবধান হতে বলি। একটু পরে দুর্বৃত্তরা আবার হানা দেয়। এদিকে ট্রেনের চালক বারবার চেষ্টা করছেন ট্রেনটি চালাতে। আমরা স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম ব্রেকের নজেল ঘুরিয়ে আমাদের ছাদে বাতাস ছেড়ে দেয়ার শব্দ। আমি কর্তব্যরত এটেন্ডেন্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। বলি প্রতিরোধ করতে। কিন্তু তারা কিছু করতে পারবে না বলে জানায়। এক যাত্রী উঠে গিয়ে দেখেন কোচের একটি দরজা খোলা। চাইলে দুর্বৃত্তরা সহজেই জানালা দিয়ে কামরায় ঢুকে যেতে পারে। এটেন্ডেন্টরা ন্যূনতম দায়িত্ববোধের পরিচয় দিচ্ছে না। তারা ব্যস্ত বিনা টিকেটের যাত্রীদের বসানোর ব্যবস্থা নিয়ে। এতে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে এটেন্ডেন্ট পুলিশ ডেকে আনে। পুলিশেরা ছাদে অবস্থানরত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কিছু করতে অস্বীকৃতি জানায়। এদিকে কামরার ভেতরে বসেই শোনা যাচ্ছিল দুর্বৃত্তদের বীরদর্পে ছোটাছুটির আওয়াজ। কামরার দেয়ালে লাগানো রেল পুলিশের কন্ট্রোল রুমের নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও কোন সাড়া পাওয়া যায় নি। এক মহিলা যাত্রী জানান ঠিক দুদিন আগে ঊর্ধ্বগামী তূর্ণা এক্সপ্রেসে একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। রাতে যেসব ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপর দিয়ে যায় সবগুলোতেই নাকি এসব ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। রেল পুলিশ যদি রাতের বেলায় উক্ত জেলার স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামিয়ে ছাদের যাত্রীদের পাকড়াও করে সহজেই দুর্বৃত্তদের ধরা যায়। এভাবে ট্রেনটি প্রায় আধা ঘন্টা চালু ও বন্ধের মধ্য দিয়ে কাটালো। এই রেল দুর্বৃত্তদের কারণে রেলের যাত্রীদের যেমন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনি ট্রেনও স্বাভাবিক গতিতে ছুটতে পারছে না। ফলে প্রতিদিনই রাতের ট্রেনগুলোতে অনাকাংখিত বিলম্ব হচ্ছে।
যারা রেলওয়েকে নিরাপদ ও স্বাছন্দ্যময় পরিবহন ভেবে নিশ্চিন্তে যাতায়াত করেন তাদেরকে আরো সতর্ক হতে অনুরোধ করছি। দুর্বৃত্তরা মালামাল লুট করতে গিয়ে বড়ো ধরনের শারীরিক ক্ষতি করতে পারে আপনার।
(সংগৃহীত)
ভালো থাকুন | School of Awareness
No comments:
Post a Comment