রাজধানী ঢাকা'র ৪৯টি থানার ৮টি ডিভিশনাল জোনে ১৩৫টি ছিনতাই স্পট চিহ্নিত করে কড়া নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। আর এর মধ্যেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। পাশাপাশি ছিনতাই কাজে বেড়ে গেছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে রামপুরা হাজিপাড়া পেট্রল পাম্পের সামনে দিয়ে রিকশাযোগে বাসায় ফিরছিলেন মানিক নামের একজন ব্যবসায়ী। রংসাইড দিয়েই আরেকটি রিকশা তার গতিরোধ করে কুশল বিনিময় করে দুই যুবক। বাসার সকলে এবং খালাম্মা কেমন আছে জানতে চায় তারা। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক যুবক পিস্তল বের করে মানিকের কোমরে ঠেকিয়ে টাকা পয়সা যা আছে দিয়ে দিতে বলেন। নিজে টাকা বের করার আগেই ওই দুই যুবক মানিকের পকেট থেকে ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। তার পকেটে দুটি দামি ব্যান্ডের মোবাইল থাকলেও তা নেয়নি ওই ছিরতাইকারিরা। শুধু এ ঘটনাই নয়, গত কয়েকদিনে উত্তরা, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, যাত্রাবাড়ী, গেন্ডারিয়া ও পুরান ঢাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার শিকার বেশিরভাগই নারী।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বাড়তি ঝামেলা এড়াতে থানায় মামলা বা জিডি না করে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। এ কারণে ছিনতাইয়ের সঠিক পরিসংখ্যান থাকে না থানাগুলোতে। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে গড়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০টি ছিনতাইয়ের ঘটনার শিকার নারী ও পুরুষ চিকিৎসা নিচ্ছে। গতবছর শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিনতাইয়ের শিকার ২৬২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। রাজধানীর ৪৯টি থানায় যেসব জিডি করা হয় তার বেশিরভাগই থানার আশপাশের রাস্তায় মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাইয়ের অভিযোগ।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা, বাড্ডা, বনানী, খিলক্ষেত, ভাষানটেক, মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, দারুস সালাম, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, গুলিস্তান, রামপুরা, হাজারিবাগসহ মহানগরীর থানা এলাকায় অন্তত প্রায় ১৩৫টি ছিনতাইয়ের স্পট রয়েছে। এসব স্পট চিহ্নিত করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের ডিসি মোঃ মাসুদুর রহমান বলেছেন, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের ধরলেও খুব সহজেই জামিন পেয়ে বেরিয়ে আবার পুরনো কাজে লেগে যায়। তবে ছিনতাই প্রতিরোধে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে বেশ কয়জন ছিনতাইকারি ধরাও পড়েছে। ঈদকে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাশাপাশি পোশাকে ও সাদা পোশাকেও মাঠে রয়েছে পুলিশের একাধিক টিম।
অপরাধপ্রবণ স্পটগুলো হলো, নিউ ইস্কাটন রোড, ইস্কাটন গার্ডেন রোড, দিলু রোড, কাকরাইল মোড়, মৎস্য ভবন এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর ও কাঁটাবন। দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, বলাকা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এলাকা, কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা, ফকিরাপুল, রেলওয়ে হাসপাতাল রোড, পীরজঙ্গি মাজার, শান্তিনগর মোড়, নটর ডেম কলেজ গেট, ফকিরাপুল গরম পানির গলি, রাজারবাগ টেলিকম ভবনের সামনের রাস্তা, ইত্তেফাক মোড়, নয়াপল্টন ভাসানী গলি, পুরানা পল্টনের মল্লিক প্লাজার সামনে ও আরামবাগ।
উত্তরা: ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি সড়ক, আবদুল্লাহপুর, হাউসবিল্ডিং, জসীমউদ্দীন রোড, বিমানবন্দর গোলচত্বর ও রেলস্টেশন এলাকা। খিলগাঁও-রামপুরা-বাড্ডা: গোড়ান, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, খিলগাঁও ওভারব্রিজ, পল্লীমা সংসদ এলাকা, ভূঁইয়াপাড়া বালুর মাঠ, রামপুরা ব্রিজ, টিভি রোড, মেরুল বাড্ডা বাজার, উত্তর বাড্ডা থানা রোড, দক্ষিণ বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড, আফতাবনগর লোহার ব্রিজ, মধ্য বাড্ডা ব্যাপারী গলি, বাজার গলি, পূর্ব বাড্ডা কবরস্থান রোড ও লিঙ্ক রোড।
যাত্রাবাড়ী-কদমতলী-শ্যামপুর: বিবির বাগিচা, কুতুবখালী, উত্তর যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টি, দয়াগঞ্জ মোড়, কাজলার পাড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, জনপদ সড়ক, ধলপুর সিটিপল্লি, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর কবরস্থান রোড, যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের আশপাশে, মানিকনগর, মীর হাজীরবাগ ঘুণ্টিঘর, জুরাইন বালুর মাঠ, কুদার বাজার, মেডিকেল রোড, কদমতলী ওয়াসা রোড, নামা শ্যামপুর।
গুলশান-বনানী: গুলশান লেকপাড়, নিকেতন, শুটিং ক্লাবের সামনে, কাকলী মোড়, বনানী কাঁচাবাজার রোড, কড়াইল বস্তি, বনানী উড়াল সড়ক, সৈনিক ক্লাব ও চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকা।
ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর: ধানমন্ডির আট নম্বর ব্রিজ, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, কলাবাগান খেলার মাঠ, সার্কুলার রোড (ভূতের গলি), মিরপুর সড়ক, মোহাম্মদপুরের আসাদ এভিনিউ, আওরঙ্গজেব রোড, কাঁটাসুর, বাঁশগাড়ি, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল কলেজ এলাকা, আদাবর ১৪ নম্বর সড়ক, বায়তুল আমান, রিং রোড ও হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ।
মহাখালী-তেজগাঁও: মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, কাঁচাবাজারের সামনে, তিব্বত মোড়, উত্তর বেগুনবাড়ী, হাতিরঝিল, মগবাজার মোড়, মালিবাগ সুপার মার্কেটের সামনে, কারওয়ান বাজার, গ্রিনরোড, ইন্দিরা রোড সংলগ্ন টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের পেছনের গলি।
মিরপুর: মিরপুর বেড়িবাঁধের শাহ আলী মোড় থেকে ধউর, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর, মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, দক্ষিণ মণিপুর, বাউনিয়া বাঁধ, বিহারি কলোনি, আগারগাঁও মোড়, আইডিবি ভবনের সামনে, কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেটের পাশের সড়ক, শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের সড়ক, আগারগাঁও ক্রসিং, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, দারুস সালাম, মাজার রোড।
পুরান ঢাকা: চানখাঁরপুল, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, নিমতলী, সদরঘাট, বাবুবাজার, কাজী রিয়াজ উদ্দিন রোড, ধোলাইখাল, শহীদনগর ও কামরাঙ্গীরচর।
ঢাকা, ১৩ জুন ২০১৭খ্রিঃ
(সংগৃহীত)
ভালো থাকুন | School of Awareness
No comments:
Post a Comment