ভোর ৪:৫০,
ঢাকার প্রায় সব মসজিদে একযোগে ফজরের আজান হচ্ছে। ঠিক এই সময় +8801708867290 এই নাম্বার থেকে একটা কল আসলো। আমি ভয় পেয়ে গেছি; এমন সময় কোন সাধারণ মানুষ কোন সাধারণ কারণে কাউকে কল দেয় না। এই সময় কল আসলে আমি খুব বড় কোন দুর্ঘটনার (যেমন, কারোর মৃত্যু সংবাদ) আশংকা করি এবং ভয়ে ভয়ে ফোন ধরি। আজকে রাতে আবার খুব আপন একজন জার্নিতে ছিল। তাই ভয়টা আরও একটু বেশিই পেয়েছিলাম। তো, ফোন ধরার পর বিশাল লম্বা সালাম (আমার মনে হল ইচ্ছাকৃত ভাবে কণ্ঠ বিকৃত এবং ভারী করা)।
অতঃপর, এই সময়ে সালামের কি মোজেজা, এই সময় নামাজ পড়ার সময়, দুনিয়ার ধন সম্পদ যে কোন কাজে আসবে না, কবরে শুধু সাড়ে ৩ হাত সাদা কাফনের কাপড় ছাড়া যে আর কিছুই নিয়ে যাওয়া যাবে না সে বিষয়ে, দুনিয়াদারী বিষয়ে অনেক হাদিস শুনালেন এবং প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করলেন। প্রতি হাদিসের/বাণীর পর আমি শুধু উনার ইচ্ছায় আলহামদুলিল্লাহ/সুভাহানাল্লাহ বলা ছাড়া আর কোন শব্দ উচ্চারণ করার সুযোগ পাইনি। আমি ভাবছিলাম যে হয়তো, মাঝে মাঝে ম্যাসেজে যে দ্বীনের দাওয়াত দেয় বা তাবলীগ জামাতে যে মানুষ অন্য মানুষকে আল্লাহর পথের দাওয়াত দেয় এইটাও মনে হয় একটা নতুন পদ্ধতি। এভাবে উনি আমাকে দাওয়াত দেয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও এই টাইমে মানুষের ঘুম ভাঙ্গাইয়া দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল সংবাদ দেয়াটাকেও আমি অসভ্যতা-জ্ঞান করি তার পরও খুব একটা মাইন্ড করিনাই। কেননা, এইসব করে যদি একজন মানুষ শান্তি পান এবং তার জন্য আমার খানিকটা ঘুম নষ্টও হয়, এমন কোন ক্ষতি নাই। আরেকজনের উপকার তো হল।
পরের স্টেপে আমাকে খানিক দম ফেলানোর সুযোগ দিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলেন, যে “আল্লাহর ভূমির কোন জেলায় অবস্থান করছেন বাবা?”
আমি অত্যন্ত বিনয়ের সহিত আমার ঠিকানা জানাতে অস্বীকার করি এবং বলি যে আমার ঠিকানা জানাতে চাচ্ছি না। এতে উনি খুব আহত হলেন এবং রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন। আমি যে কতো বড় নাফরমান এবং এই অস্বীকার করায় কি কি ক্ষতি হল সেগুলো সম্পর্কে অনেক গরম গরম কথা বলেন। বলতে বলতে উনি আমাকে জানালেন যে উনি একজন ফেরেশতা, আল্লাহতালা আমার খুব বড় একটা উপকার করার জন্য উনাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। আমি বললাম যে “দেখুন, আপনার মনে হয় খুব কম পড়াশোনা জানা, আল্লাহর সৃষ্টির বিশালতা সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নাই। তিনি আপনার দেখা পৃথিবীর বাইরেও আরও অনেক কিছু সৃষ্টি করেছেন। যিনি এতো কিছু সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তার একজন বান্দা কোথায় আছে সেটা জানার জন্য আমার কথার অপেক্ষা করবেন?” এতে তার রাগ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ (যার মধ্যে অনেক গুলই আজকেই আমি জীবনের প্রথম শুনলাম এবং সেগুলো উচ্চারণ করার মতো মানসিকতা এখনো গড়ে তুলতে পারিনাই) করতে লাগলেন এবং অভিশাপ দিতে লাগলেন। আমার অনেক ক্ষতির কথা জানালেন। আমার সন্তান আগামী ৩ দিনের মধ্যে মারা যাবে এবং আমার পরিবারের সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, আমার গাড়ী এক্সিডেন্ট হবে আগামী ৩ দিনের মধ্যে এসব তথ্য জানালেন। কথা বলারই সুযোগ পাই নাই একটুও। একসময় এইসব ক্ষতি থেকে বাঁচাতে আমার কাছে ১ লক্ষ টাকা দাবী করে বসলেন। না হলে এইসব ক্ষতি থেকে আমার আর কোন রেহাই নাই। এক ফাঁকে জানতে চাইলাম যে, “আমার তো সন্তান নাই এখনো, সেক্ষেত্রে সন্তানের ভাগের ক্ষতিটা কে বহন করবে?” অপর প্রান্তে গালাগালি আর অভিশাপ বর্ষণ চলতে লাগলো।
এমতাবস্থায় উনার ফেরেশতা পদ নিয়ে আমার মনে সংশয় দেখা দিল, আমি তার কাছে জানতে চাইলাম “আল্লাহ কি ফেরেশতাদের কিছু ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছেন নাকি? আপনাদের সহনশীলতা মনে হয় আর আগের মতো নাই। আর আগে তো জানতাম ফেরেশতারা গায়েবী প্রক্রিয়ায় মানুষের সাথে যোগাযোগ করে, এখন দেখছি আপনাদেরও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা লাগে, ক্ষুধা-তৃষ্ণার ঊর্ধ্বে থাকা ফেরেশতাদের ইদানীং টাকা পয়সারও দরকার হয়”!
উনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। হতাশায় ফোন কেটে দিলেন। এবং কাটার আগে উনি জানালেন যে আমার মতো নাফরমান-নালায়েক বান্দা নাকি আর একটাও নাই এই দুনিয়ায়।
এই গ্রুপে কি গ্রামীণফোন বা পুলিশে কাজ করেন এমন কেও আছেন, যে এই ব্যাপারে কোন লিগ্যাল পদক্ষেপ নিতে পারবেন বা উনার পরিচয় আবিষ্কার করতে পারবেন? আমাকে হয়তো আর ফোন করবেন না উনি, কিন্তু আমার মতো আরও অনেকেই ব্ল্যাক-মেইলের স্বীকার হতে পারে এই ফেরেশতার দ্বারা।
(সংগৃহীত)
ভালো থাকুন | School of Awareness
No comments:
Post a Comment