Wednesday, January 30, 2019

মেয়েরা রিকশায় চলাচলে সতর্ক হোন!


একটা ঘটনা যা আপনাকে আরো বেশি সতর্ক করে তুলবে।

প্রথম ছবিটা আমার এক্সিডেন্ট হওয়ার ঠিক ২মিনিট আগে। মানে আমি যদি ৩০শে ডিসেম্বর মারা যেতাম তাহলে সবাই বলতো সেলফি তুলতে যেয়েই অসাবধানতার ফলে রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচায়ে মারা গেছে। দোষটা আমার ঘাড়েই আসতো। ঘটনাটা কেরানীগঞ্জ আমার নানু বাড়ির কাছেই ঘটছে।
আমার পাশে আম্মুর বান্ধবি (লাভলি খালামনি) আর তার মেয়ে বসা। ঘটনাটা ঘটার ১মিনিট আগেও আমার ওড়না চেক করলাম, ঠিকঠাক মতোই ছিলো।
ব্যাগে মাত্র মোবাইলটা রাখলাম অমনেই ওড়নায় হালকা টান লাগলো। ঢাকায় একবার ওড়না চাকায় পেঁচায়ে গেছিলো, তখন হালকা ব্যাথা পাইছিলাম।
তাই এবার যখন হালকা টান লাগলো তখন অমনেই আমি গলার ওড়নাটা ধরে (যেনো গলায় ব্যাথা না পাই) বললাম মামা থামান।
তারপর যে কি হইছে সেটা আমার আর কিছু মনে নাই। সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যাই।
অটোরিকশা যে এত খারাপ আগে বুঝিনাই। থামান বলার সাথে সাথেই এরা যে কত দূর চলে যায় স্পিডে এরাই যানে।

যখন জ্ঞান আসলো মনে হইলো কোন এক জগত থেকে যেনো আমার আত্মাটা ঘুরে আসলো। মাথাটা সাথে সাথেই কেমন যেনো ঘুরালো। কানে শুধু এটাই শুনতেছি আম্মু চিৎকার করে কানতেছে আর বলতেসে ''আল্লাহ আমার পিঙ্কি আর নাই। আল্লাহ! আমার পিঙ্কি! আমার পিঙ্কি নাই''
চোখ খুলে দেখি আমার মা মাটিতে লুটায়ে পড়ে আমাকে ধরে পাগলের মতো চিৎকার করে কানতেছে। আমার কাছে সব কিছু কেমন যেনো আশ্চর্য মনে হইতেছিল। ভাবতেছিলাম আম্মু মাটিতে কেন বসা? আমাকে ধরেই কেন কানতেছে?
তখন আমি নিজেকেও নিজে ফিল করতে পারতেছিলাম না। আম্মু কে শুধু এটাই বললাম ''আম্মু আমি কি মরে গেছিলাম? আমি কি বেঁচে আছি?'' এই কথাটা যে আমি কেন বলছিলাম নিজেও জানিনা। মনে হইছিলো আমি অন্য কোনো দুনিয়া থেকে ফেরত আসছি।

কে যেনো আমাকে ধরে উঠালো। তাকায়ে দেখি চারপাশে মানুষ আমাকে ভীর লাগায়ে দেখতেছে। আম্মু আর লাভলি খালামনি শিউর হয়ে গেছে আমি মারা গেছি। আমিতো আর ফাঁসির লাশ দেখিনাই কিন্তু শুনছি অনেক ফাঁসি দিলে জিহবা বের হয়ে যায়। গরু খাশি জবাই দেবার পর যেমন জিহবা বের হয়ে বাকা হয়ে কামর লেগে যায় আমারও তাই হইছে। আর আম্মুর আর্তনাদ পানি দেন, কেউ একটু পানি দেন। আমার মেয়ের গলা! আম্মু শুধু চিৎকার করতেছিল আমার মেয়ের গলা!
ওড়নাটা এমনভাবে চাকার সাথে পেচায়েছিল যে আমি একদম গোল হয়ে রিকশার যেখানে পা রাখে সেখানে মাথা চলে গেছিলো। কোনোভাবেই ওড়না ছাড়াতে পারতেছিল না। ওড়না গলার মধ্যে ডেবে গেছিলো। লাভলি খালামনি বুদ্ধি করে রিকশা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়াতে হালকা হইছিল ওড়নাটা নাহলে তখনতো দম বন্ধ হয়েই ছিলো কিন্তু জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটাও ঐখানেও যেতো। আমি তখনো কোনো ব্যাথা অনুভব করতে পারতেছিলাম না। শুধু মনে হইতেছিলো জিহবা কেটে দুইভাগ হয়ে গেছে।
গলা থেকে ওড়নাটা সরানোটাও ডিফিকাল্ট হয়ে গেছিলো কারন ওড়নাটা এমন ভাবে ফাস লাগছে গলা একদম চিকন হয়ে গেছিলো। তখন মনে হয় আল্লাহই সাথে সাথে একটা সিএনজি পাঠায়ে দিছিলো। সিএনজিতে উঠার পর শুরু হইলো আমার যন্ত্রণা। সেই মৃত্যু যন্ত্রনার বর্ণনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নাই। কালেমা আর তউবা পরতেছিলাম অনবরত। কারণ ঐ মুহূর্তে আমি জানি কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আর এই দুনিয়াতে থাকব না। আম্মু কে বলতেসিলাম আমাকে নানু মামা আর আপুর পাশেই কবর দিও। আমাকে মাফ করে দিও। আমি মরে গেলে আমার দেনমহরের টাকাটা রায়হান কে ফেরত দিয়ে দিও।
আমার মা যে কি পরিমান পাগল হয়ে গেছিলো সেটা কাওকে বলে বোঝানো যাবেনা। মা কি জিনিস সেটা সেইদিনই বুঝতে পারছি। একটা ছোট্ট শিশু বাচ্চাকে মা যেভাবে বুকে আগলায়ে রাখে আজকে ৬দিন ধরে আমার মা তাই করতেছে। হাসপাতালে নেয়ার পর অক্সিজেন ইনজেকশন সাপোসিটার ওষুধ খাওয়ানোর ২ ঘন্টার পর মনে হইছে আমি হয়তো বেঁচে যাবো কিন্তু সারাজীবন এই কষ্ট নিয়েই বাঁচতে চাই। ২ঘন্টা আগের সেই কষ্টের চেয়ে এখনকার কষ্ট হাজার কোটি গুনে ভাল। হাত পা সারা শরীর ব্যাথা। জিহবাটা দাতের কামরে ছিদ্র হয়ে গেছে।

এখনকার কষ্টগুলো কেমন জানেন? সারাক্ষণ মনে হয় গলায় কেউ ব্লেড দিয়ে পোঁচ দিতেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় কেউ লবন লাগায়ে দিতেছে। সারা রাত ছটফট করতে থাকি। শুতে গেলেও মনে হয় গলার ঘাড়ের রগ দা দিয়ে কাটতেছে। বসতে গেলেও টান লাগে। আম্মুর হেল্প ছাড়া উঠতেও পারিনা বসতেও পারিনা। ২৪টা ঘন্টা আম্মুকে জ্বালাতে থাকি। বাথরুমে গেলেও আম্মু নিয়ে যায়। ভাত খাওয়া পানি খাওয়া চুল বাধা, খাটে শুয়েই শ্যাম্পু করে দেয়া কি না করতেছে আমার মা।
আমার এই ব্যাথা যন্ত্রণা আমি যতটুকু না ফিল করতে পারতেছি তার চেয়ে কোটি গুন বেশি ফিল করতেছে আমার মা।
আল্লাহ আমার সব নেক হায়াত আমার মা কে দেক। সবাই আমার আম্মুর জন্য দোয়া কইরো। আমি এখন আগের তুলনাই আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভালো আছি।
সবাইকে বলছি ওড়নটা সাবধানে রেখে চলাচল করবেন। ভালো থাকবেন।
(সংগৃহীত)

ভালো থাকুন | School of Awareness

No comments:

Post a Comment