ঢাকায় থাকেন বা নতুন এসেছেন বা চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যাবেন? তাদের একবার পড়ে নেওয়া খুব জরুরী; 'হাউ টু সারভাইভ ইন ঢাকা সিটি?'
সবাইকে নিরাপদ অবস্থানে দেখতে এই টিপসগুলোর দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক দিন ধরে অনুভব করছিলাম→
১. ঢাকাতে কখনও বাসে জানালার পাশে বসে মোবাইল টিপবেন না। কখন নিয়ে যাবে তা টের পাবেন না। শুধু বাস না, কার, রিকশা কিছুই নিরাপদ না। সিএনজির ছাদ কেটেও মোবাইল নিয়ে নেয়। মোবাইল পকেটে নিরাপদ। নাকে বা কানে সোনার অলঙ্কারও নিরাপদ না।
২. রিকশাতে কোলে ব্যাগ? টান দিবে, ধরতে গিয়ে আপনি রাস্তায় পড়বেন, এবং আপনাকে রাস্তায় আছড়ে অনেক দূর টেনে নিয়ে যাবে, তাতে সিরিয়াস হেড অ্যান্ড স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির সম্ভাবনা থাকে। ব্যাকপ্যাক ব্যাবহার করুন। বা ব্যাগ পায়ের ফাকে রাখুন। মাঝে মাঝে ধরে রাখলেই ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।
৩. রাস্তায় কিছু খাবেন না। আই মিন কিছুই না। দূরপাল্লার জার্নি, পাশের যাত্রী কিছু দিলে খান না, তাতে কি? হয়তো যে পানি বা ডাব কিনলেন, বা অন্যকিছু তাতেই থাকতে পারে ঔষধ মেশানো। প্রতারকরা অনেক চালাক এখন।
৪. ট্রেন জার্নিতে দরজার পাশে, দুই বগির পাশে টাইম নিবেন না, কিংবা যতোই ভালো লাগুক দরজায় দাঁড়িয়ে বিড়ি টানবেন না। ট্রেনের ছাদে চলাচল যতোই রোমান্টিক লাগুক, যে গ্যাংগুলো ছিনতাই করে, তারা রুথলেস। অনেক লাশ পাওয়া যায় ট্রেন লাইনে, ম্যাক্সিমাম বেওয়ারিশ দাফন হয়।
৫. ছিনতাইকারী বেশ কয়েকজন। আপনি ঘেরাও। পকেটে দামী ফোন। আমার মতে ফোনের মায়া ত্যাগ করা ভালো, কারণ যারা ছিনতাইকারী তারা যথেস্ট ডেসপারেট। যদি পালিয়ে যেতে পারেন ইউ আর টু লাকি। বাট ফোনের দাম আপনার জীবনের দামের চেয়ে বেশি না, ট্রাস্ট মি।
৬. বান্ধবী বা মেয়ে বন্ধু, রেস্টুরেন্ট বা পার্ক। হঠাৎ একদল ছেলে, একটা গ্যাং। আজে বাজে কথা বলছে, বাজে ইংগিত দিচ্ছে। ওরা কাইন্ড অফ চাইছে আপনি ঝামেলায় জড়ান। আপনারও রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে, গার্লফ্রেন্ডের সামনে এরকম অপমান? জাস্ট এড়িয়ে যান, এ রকম সিচুয়েশনে আপনার সেলফ এস্টিমে যতোই লাগুক, কনফ্লিক্ট লস প্রজেক্ট। দুজন থাকলেও কথা, দুয়ের অধিক হলেই ঝামেলা লস প্রজেক্ট। আর নির্জন জায়গা হলে আরো আগে সরে যান।
৭. ভোররাতে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। ভয়ানক রিস্কি ঢাকার রাস্তা। পারলে বাসস্টপে বা ট্রেন স্টেশনে অপেক্ষা করুন সকালের যখন রাস্তায় যথেস্ট মানুষ থাকবে। এ সময় ছিনতাইকারীরা একটিভ থাকে। টেকনোলজিকালি এডভান্স হলে, উবার ডাকুন।
৮. ট্রেন স্টেশনে বা সদরঘাটে ভারী জিনিস নিয়ে আসছেন তো মরেছেন। আপনার কাছ থেকে চাঁদার মতো ৪০০-৫০০ টাকা খসিয়ে ছাড়বে। সাবধানে থাকুন।
৯. নিউমার্কেটের মতো মার্কেটগুলোতে বা নীলক্ষেতে কাউকে নিয়ে শপিং এ গেছেন, দাম জিজ্ঞাসা করছেন। কিন্তু যদি উনি বলে আপনি দাম বলেন, আপনি না নিতে চাইলেও দাম বলার জন্য জোরাজুরি করবে। মেজাজ দেখিয়ে লাভ নাই, এরা একটা গ্যাং, সাথে মেয়ে মানুষ দেখবে তো আরো বেশি ঝামেলা করবে। দাম বলুন একটা দরকার হলে অনেক কম করে বলুন। আপনার ক্লাস নিয়ে কমেন্ট করবে, যতোই অপমানিত লাগুক সরে যান। এখানে ঝামেলা লস প্রজেক্ট।
১০. বাসে পিছনের পকেটে ওয়ালেট বা সামনের পকেটে মোবাইল সেফ না। সাথে ব্যাগ থাকলে ব্যাগের ভিতর ফোন আর বাড়তি টাকা রেখে দিন। বাট আপনার ব্যাগ ও কিন্তু সেফ না, সেটাকেও দেখে রাখেন।
১১. চিড়িয়াখানায় গিয়ে কিচ্ছু খাবেন না। সিংগাড়া খাইয়ে ৮০০/৯০০টাকা খসায় নিবে। একই ব্যাপার বানিজ্যমেলায় বিরিয়ানী বা নাস্তার জন্য প্রযোজ্য কিংবা হাইওয়ে সাইড হোটেলে। ফ্যামিলি নিয়ে খাইসেন তো বিপদে পড়ছেন। অন্যান্য জায়গায়, যেমন শিশুপার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান এগুলাতে দাম জিজ্ঞাসা না করে একটা ফুচকাও খাবেন না। ফুচকার দাম ১০০/১৫০ বললে কিছু করার থাকে না। খাবার আগে দাম জিজ্ঞাসা করুন, এটা খুবই ভালো একটা অভ্যাস।
১২. রাতে ঘোরাঘুরি খুবই রিস্কি। সেটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কিছু কমন অপরাধ স্পট আছে। এখন আর কোনো কমন কিছু নাই, সব জায়গাই রিস্কি। চোখ কান খোলা রাখুন।
১৩. বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন, হঠাৎ একটা মাইক্রো এসে থামলো, বা সেটা একটা কার ও হতে পারে। 'ট্রিপ' নিচ্ছে। উঠবেন না। মেয়ে হলে আরো আগে না; যতোই আরামের ভ্রমণের নিশ্চয়তা দিক, হতে পারেন ছিনতাই, ধর্ষণ বা কিডন্যাপিংয়ের শিকার। রাতের বেলা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের উপর সেফ কিছু নাই।
১৪. রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎ ভদ্রবেশী কেউ এসে, সে হতে পারে ছেলে বা মেয়ে, আপনার ফোন চাইলো, উনার কোন সমস্যা হয়তো, একটা ফোন দিবে কাউকে। ফোনটা দিলেন, দেখলেন লোকটা বাইকে উঠে হাওয়া! জ্বী, এমনও হয়।
১৫. হয়তো বন্ধু বান্ধবের আবদার, পার্টি। গিয়েছেন বুজ কিনতে কোনো বারে। বারের সামনেই সাদা পোশাকে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে, বুজ যাবে, টাকা যাবে, ইজ্জতও যাবে।
১৬. সাথে সবসময় আইডেন্টিফিকেশন ডকুমেন্ট রাখুন। কাজে দেয়। হয়তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন, তখনও কাজে দেয়।
১৭. হাটছেন, হঠাৎ অপরিচিত কেউ পিছন থেকে ডাকছে। আপনি যদি হেটে নিরাপদ দূরত্বে যেতে পারেন চলে যান। কারণ উনি আপনাকে আটকাবে, গ্যাং আসবে, দ্যান আপনি ছিনতাইয়ের শিকার। একই ব্যাপার ধাক্কা লাগিয়ে করবে। জাস্ট হেটে চলে যান।
১৮. বড় অংকের নগদ টাকা ট্রান্সফার করবেন না। রিস্কি, এরা যে কোথায় নাই, ইউ উইল ওয়ান্ডার।
সবচেয়ে বড় কথা, সবসময় সতর্ক থাকুন, চোখ কান খোলা রাখুন, নিজের ইন্সটিক্টকে বিলিভ করুন। স্টে সেফ।
লেখা: দেবাশিষ দত্ত।
ভালো থাকুন | School of Awareness
No comments:
Post a Comment